"ফুলের সুবাস নিতে কার না ভালো লাগে। ফুল দেখলে মুহূর্তেই নয়ন-মন জুড়ায় যেকোনো মানুষের। আর এই ফল ও ফুলের চারা বিক্রি করে সংসার চলছে ইমনের। প্রায় ১০ থেকে ১২ বছর ধরে দাউদকান্দি পৌর সদরের শহীদ রিফাত শিশু পার্কের সামনে সপ্তাহে দুই দিন ফুল-ফল আর শাক-সবজির চারা বিক্রি করছেন মোঃ ইমন মিয়া (২৮)।
জানা যায়, দাউদকান্দি পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের উত্তর গাজীপুর গ্রামের বাসিন্দা ইমন। সেখানেই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বসবাস। ইমন চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার বাগানবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৪ সালে এসএসসি পাশ করেন। পরে, দাউদকান্দির হাসানপুর শহীদ নজরুল সরকারি ডিগ্রি কলেজে এইচএসসিতে ভর্তি হন।
গাছের চারা বিক্রি করা তার বাবার ব্যবসা ছিলো। কলেজে পড়াকালীন হঠাৎ ইমনের বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরিবারে নেমে আসে অভাব অনটন। অভাবের কারণে লেখাপড়া বন্ধ করে দিয়ে বাবার ছোট নার্সারির চারা বিক্রির কাজে লেগে যান। আর, এতেই ভাগ্য বদলে যায় পরিবারের।
মোঃ ইমন মিয়া বলেন, কলেজে পড়ার সময়ে বাবা অসুস্থ হয়। পরিবারে নেমে আসে অভাব অনটন। তখন লেখাপড়া বন্ধ করে নিজ বাড়িতে বাবার তৈরী নার্সারিতে কাজ করা শুরু করি। সেখানে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির চারা বিক্রি শুরু করি। স্থানীয় দাউদকান্দি পৌর বাজারে।
সপ্তাহে দুই দিন শনিবার ও বুধবার অটোরিকশা করে দাউদকান্দি বাজারে নিয়ে আসি চারা গাছ। এতে ভালো বিক্রি হয়। নার্সারিতে ফুল-ফল আর শাক-সবজির সব ধরনের চারা রয়েছে। এখান থেকে চারা খুচরা ও পাইকারি বিক্রি করি। প্রতিমাসে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা আয় হয়। যা দিয়ে চলছে আমাদের সংসার।
ইমনের বাবা মোঃ মিজান মিয়া বলেন, আমি অসুস্থ হওয়ার পর থেকে খুব কষ্টে চলছিল সংসার। আমার এই ছেলের কারণে আজ আমার পরিবার স্বাবলম্বী এবং কিছু অর্থ সঞ্চয় হয়েছে এবং ডাল ভাত খেয়ে বেছে আছি।
গাজীপুর গ্রামের মোঃ জহিরুল ইসলাম মাস্টার বলেন, ইমন ছেলেটা অত্যন্ত ভাল। এক সময় অনেক কষ্টে চলতো তার পরিবার। বর্তমানে সে নার্সারি ব্যবসার মাধ্যমে সংসারে সুখের দেখা মিলেছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল পরিবারের হাল ধরতে গিয়ে তার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে। আমি তাকে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। মেধাবী ইমন ব্যবসার পাশাপাশি লেখাপড়া করে আরও ভালো কিছু করতে পারবে।
উপজেলা উপ কৃষি কর্মকর্তা সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, পৌর সদরে নার্সারি ব্যবসা করে সফল মানুষ ইমন। প্রচুর ফল ফুল ও ঔষধি গাছের চারা রয়েছে তার কাছে। মাঝেমধ্যে কোন পরামর্শ দরকার হলে আমার কাছে আসেন। কৃষি অফিসের মাধ্যমে আমরা তাকে বিভিন্ন সময় পরামর্শ দিয়ে থাকি। ভবিষ্যতেও কোন প্রয়োজন হলে আমাদের কাছে আসলে আমরা তাকে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করব।
চারা কিনতে আশা ডাক্তার সাইফুল ইসলাম টিটু বলেন, ফল ও ফুলের অন্য রকম সৌন্দর্য রয়েছে। ফল ও ফুল দেখলে যে কারোর মন শীতল হয়ে যায়। তাই বাড়ির বিভিন্ন জায়গাতে ফল ও ফুলের চারা লাগিয়ে সৌন্দর্য বর্ধণ করতে চাই। এজন্যে ইমনের কাছ থেকে ফল ও ফুলের চারা কিনতে এসেছি। ওর চারাগুলো দেখতে সুন্দর দামেও কম।
পিকে/এসপি